Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মিষ্টি ফসল চাষাবাদে ইঁদুরের মাধ্যমে

মিষ্টি ফসল চাষাবাদে ইঁদুরের মাধ্যমে
ক্ষতি ও প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তি
ড. মো. আমজাদ হোসেন১ ড. মো. আতাউর রহমান২
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান অসামান্য। এ দেশের কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ কৃষি খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য এবং রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল। উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রোগবালাই ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনিষ্টকারী মেরুদ-ি প্রাণী দমন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইঁদুর এক বড় সমস্যা। ইঁদুর মাঠের শস্য কেটে নষ্ট করে খায় এবং গর্তে জমা করে। মিষ্টি ফসলও অনিষ্টকারী ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন মিষ্টি ফসলে ইঁদুরের মাধ্যমে ক্ষতির প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আখ
বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুন-আগস্ট মাসে বৃষ্টি হলেই ইঁদুর আখের মাঠে কোন গর্ত না করে আখ খেয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। মাটির ঠিক উপর থেকে আখ খাওয়া শুরু করে। গোড়ার দিক থেকে কোন আখের পুরা গার্থ, অর্ধেক গার্থ অথবা একটু খেয়ে এভাবে আখের ব্যাপক ক্ষতি করে। বাতাস হলেই ইঁদুরে ক্ষতিগ্রস্ত আখগুলো ভেঙে পড়ে। আখের ফলন প্রায় ৮- ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।                                                                 
সুগারবিট
ইঁদুর সুগারবিটের চারা গাছ ও পরিপক্ব উভয় অবস্থায় ক্ষতি করে থাকে। সুগারবিটের ক্ষেত পাতায় ঢাকা থাকে যার ফলে ইঁদুর প্রচুর সংখ্যক গর্ত করে। মাঠের কালো ইঁদুর জমিতে গর্ত করে এবং চারা গাছ ও গাছের পাতা কেটে গর্তে নিয়ে জমা করে। আবার গর্তের মাটি উপরে এক জায়গায় জড়ো করে মাটির ঢিবি তৈরি করে সুগারবিটের চারা গাছ ঢেকে দিয়ে ক্ষতি করে। সুগারবিটের মূল একটু বড় হলেই তা কেটে দেয়। তারপর মূল যখন বড় হয় তখন ইঁদুর মাটির নিচে গর্ত করে খেয়ে ক্ষতি করে। অর্ধপরিপক্ব সুগারবিট কামড়িয়ে খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেও প্রচুর পরিমাণে সুগারবিট ক্ষতি করে থাকে। ফলে সুগারবিটের ফলন কমে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে এপ্রিল-মে মাসে সুগারবিট পরিপক্ব হলেই মাটির নিচ থেকে মূল খেয়ে ফেলে। উল্লেখ্য, মাঠে কালো ইঁদুরের ক্ষেত্রে মোট গর্তের সংখ্যাকে ৩.৭ কেজি দ্বারা গুণ করলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে বের করা যায়। ইঁদুর সুগারবিট মাঠে ফসলের ৫-৭% ক্ষতি করে থাকে।                                                                                                                                                                                                                                                                 
খেজুর
ইঁদুর খেজুরের বাগানে খেজুর গাছে ছিদ্র করে এবং সেচ নালায় গর্ত করার সময় খেজুর গাছের শিকড় কেটে ফেলে। খেজুর গাছে ফল আসা শুরু হলেই খেজুর খাওয়া শুরু করে। কচি থেকে শুরু করে খেজুর পাকা পর্যন্ত খেয়ে নষ্ট করে। খেজুরের ফলন ৩০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
নারিকেল
সাধারণত গেছো ইঁদুর নারিকেলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। একটি জরিপে দেখা ঘেছে, পরিপক্ব নারিকেলের চেয়ে কচি ডাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ফলে ডাব ছিদ্র যুক্ত হয়ে যায় এবং গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়ে। এতে নারিকেল পরিপক্ব হতে পারে না এবং ফলন অনেক কমে যায়। বাংলাদেশে দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল, খুলনায় নারিকেলের বেশি ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। এক জরিপে দেখা গেছে, গড়ে বছরে গাছপ্রতি ১৫-২০টি নারিকেল ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি বা নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য ২৫০-৪০০ টাকা।
স্টেভিয়া
স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্মজাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল  রিওমন্ড এলাকায় চাষাবাদ হতো। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এম এস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। আফ্রিকাতে এটি মধু পাতা বা চিনি পাতা নামে পরিচিত। বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু হয় ২০০১ সালে। মাঠে ইঁদুর স্টেভিয়ার চারা গাছের গোড়া কেটে ক্ষতি করে থাকে।                                                         
স্টেভিয়ার মাঠ পাতায় ঢাকা থাকে যার ফলে ইঁদুর প্রচুর সংখ্যক গর্ত করে। মাঠের কালো ইঁদুর জমিতে গর্ত করে এবং চারা গাছ ও গাছের পাতা কেটে গর্তে নিয়ে জমা করে। আবার গর্তের মাটি উপরে এক জায়গায় জড়ো করে মাটির ঢিবি তৈরি করে স্টেভিয়ার চারা গাছ ঢেকে দিয়ে ক্ষতি করে। ইঁদুর মাটিতে গর্ত করে শিকড় খেয়ে ক্ষতি করে। ফলে স্টেভিয়ার গাছ মারা যায়। এভাবে সুগারবিটের গাছ মারা যাওয়ার ফলে পাতার ফলন অনেক কমে যায়। উল্লেখ্য যে, মাঠে কালো ইঁদুরের ক্ষেত্রে মোট গর্তের সংখ্যাকে ৩.৭ কেজি দ্বারা গুণ করলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে বের করা যায়। ইঁদুর স্টেভিয়ার মাঠে পাতার ফলন ৭-১০% কমিয়ে দিয়ে থাকে।                                                                                                                                                                                                                                
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা (ওহঃবমৎধঃবফ চবংঃ সধহধমবসবহঃ)
ইঁদুরের মৌলিক চাহিদা যেমন-খাদ্য, পানি ও বাসস্থান সীমিত করে ইঁদুরের সংখ্যা কমানো যায়। ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। সমন্বিত ইঁদুর নিধন, সুফল পাবে জনগণ। এতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুরবাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে- আখের জমিতে সেচ দেওয়ার দিন। আখের জমির চারপাশের আইল উঠায়ে দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ বা রড দ্বারা আইল তৈরি করলে ইঁদুর বাসা বাঁধার জায়গা না পেয়ে সেখানে যাবে না। এভাবে আখের জমিতে ইঁদুরকে নিরুৎসাহিত করে আমাদেরকে কমিউনিটি ফারমিং গড়ে তুলতে হবে।
ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : ১) পরিবেশ সম্মতভাবে ইঁদুর দমন ২)  জৈবিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন ৩) রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন।
বিএসআরআই উদ্ভাবিত বাঁশের তৈরি ফাঁদ মাঠে ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো যায় (চিত্র-৫)। প্রতি ১০ মিটার পর পর ইঁদুর মারার ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। ফাঁদে টোপ হিসেবে নারিকেল, বিস্কুট এবং শুঁটকি মাছ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঠে একযোগে কাজটি করতে হবে। ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে এবং কারেন্ট মরিচের ধোঁয়া দিয়ে গর্ত থেকে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলতে হবে। সতেজ গর্তে কাঁচা গোবরের মিশ্রণ (২০-৩০%) দিয়ে ইঁদুর দমন করা যায়। আখের জমির চারিদিকে এক মিটার উচ্চতায় পলিথিন দ্বারা ঘিরে দিয়ে ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
ইকোসিস্টেম রক্ষায় আখের মাঠে রাতে প্যাঁচা বসার জন্য টাওয়ারের ব্যবস্থা করে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো যায়। তাই প্রতিটি উপজেলাতে বা জেলাতে প্রচুর খাসজমি আছে। উক্ত জমিতে বায়োডাইভারসিটি কর্ণার তৈরি করে, যেখানে বন বিড়াল, শিয়াল, বেজি, প্যাঁচা, বাজপাখি, চিল ইত্যাদির অভয়ারণ্য তৈরি করে এদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে এরা ইঁদুর খেয়ে (যেমন- একটি প্যাঁচা বছরে ৮০০টি ইঁদুর খায়) উপদ্রব কমিয়ে রাখে।
সুতরাং সম্মিলিত এবং সময়োপযোগী দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করেই ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব।

লেখক : ১মহাপরিচালক, বিএসআরআই, ২সিএসও, প্রধান কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিএসআরআই, ফোন: ৫৮৮৮৪৬৯১১, ই-মেইল:  dg-bsri@bsri.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon